স্বপ্নের পদ্মাসেতু, দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের কোটি মানুষের স্বপ্নকে ধারণ করে তিল তিল করে বেড়ে ওঠা এই সেতুর দুই কিলোমিটারেও বেশি এখন দৃশ্যমান। শুরু থেকে নানা জটিলতা আর ষড়যন্ত্রের পথ পেরুতে হয়েছে স্বপ্নের এই সেতুকে। এবার তার সাথে যোগ হলো পরিকল্পিত একটি গুজব।
পদ্মাসেতুতে মানুষের মাথা লাগবে। বর্তমানে এটি সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি আতঙ্কের নাম। ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটারসহ যে কোনো স্থানে রয়েছে এ ধরনের শত শত ভিডিও। সেখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ভয়াবহ সব বর্ণনা। যা খুব সহজেই আতঙ্কিত করে তুলতে পারে মানুষকে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত কয়েকদিন ধরে ছড়িয়ে দেয়া এই গুজবে বলা হচ্ছে পদ্মাসেতুর জন্য প্রয়োজন এক লাখ শিশুর মাথা। এ জন্য সারাদেশে ৪২টি দল স্কুলে গিয়ে বাড়ি থেকে অপহরণ করছে শিশুদের। এতে আতঙ্কিত হয়ে কোথাও কোথাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে স্কুল। শুধু তাই নয়, ছেলেধরা সন্দেহে বিভিন্ন স্থানে ঘটছে গণপিটুনির ঘটনাও।
এদিকে, সকলের মনে এখন একটাই প্রশ্ন, পদ্মাসেতুতে কি আসলেই মানুষের কাটা মাথা লাগে নাকি এটি নিছক একটি ষড়যন্ত্র?
গত ১০ জুলাই গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গুজব ছড়ানো একজন যুবককে আটক করে পুলিশ। যুবকের কাছ থেকে জব্দ করা স্মার্টফোন থেকে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে পুলিশ। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে একে একে বেরিয়ে আসে আরো অনেক তথ্য। যা শুনলে রীতিমতো চোখ কপালে উঠার উপক্রম হয়।
জানা গেছে, ওই যুবক মানবপাচারকারীর চক্রের একজন সদস্য। মোবাইলে কল, ফেসবুকে পোস্ট ও ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে মাথা কাটা এবং ছেলেধরার গুজব ছড়ানোই তার মূল কাজ। তাদের কয়েকটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ রয়েছে। যারা বিভিন্ন শিশু ও মানুষ অপহরণ করে পাচার করে থাকে। তাদের উপর যাতে কেউ সন্দেহ না করে সে জন্য তারা ‘পদ্মাসেতুতে শিশুর মাথা লাগবে’ এমন গুজব ছড়াতে থাকে।
এই গুজবকে আরো বিশ্বাসযোগ্য করে চীনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের গরু জবাইয়ের রক্ত প্রবাহের ছবি।
খোঁজ নিয়ে জানা জায়, ২০১৫ সালে পদ্মাসেতুর পরীক্ষামূলক ভিত্তি স্থাপনের সময় নদীতে গরু ও খাসির রক্ত ঢেলে কাজ শুরু করে চীনা শ্রমিকরা। তাদের বিশ্বাস, বড় কাজের শুরুতে পশু উৎসর্গের মাধ্যমে স্রষ্টার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, এড়ানো যায় বড় দুর্ঘটনা। আর চীনাদের সেই প্রথাকে হাতিয়ার বানিয়েই মানবপাচারকারীরা তাদের অপকর্ম ঢাকার চেষ্টা করছে।