হঠাৎ আপনার মোবাইলে অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসলো। জানতে চাওয়া হলো আপনার সিমে বিকাশ করা আছে কিনা। আপনি জানালেন, আছে। এরপর ফোনটি কেটে গেল। একদিন পর আপনার মোবাইলে বিকাশ কাস্টমার কেয়ারের নাম্বার থেকে ফোন আসলো। অতপর আপনার কাছে পিন নাম্বার চাইলো। আপনি সরল মনে দিলেন। কিছুক্ষণ পর দেখলেন আপনার অ্যাকাউন্টে টাকা চলে গেলো প্রতারকদের অ্যাকাউন্টে। শুধু বিকাশ নয়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এমন প্রতারণা হচ্ছে প্রতিনিয়তই।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রতারকরা যেসব সিম ব্যবহার করে প্রতারণা করছে তার সবগুলোই অন্য কারো নামে রেজিস্ট্রেশন করা। আর কয়েকটি মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে বিকাশ কাস্টমার কেয়ারের নাম্বারের সাথে মিল রেখে ইন্টারনেট থেকে গ্রাহকের কাছে ফোন দেয় তারা। প্রশ্ন উঠেছে, প্রতারকরা সিমটা পাচ্ছে কীভাবে?
পুলিশের তথ্য ও একাধিক অনুসন্ধান বলছে, সিম কোম্পানিগুলো তাদের রিটেলারদের কম দামে সিম বিক্রয় করার অফার দেন। যে রিটেলার অফারের সময় বেশি সিম এক্টিভ করতে পারে তার উপর তারা কমিশন পান। যে কারণে রিটেলাররা কোন সিম ক্রেতা আসলেই তার থেকে একাধিক হাতের ছাপ নেন। যার প্রত্যেকটি ছাপেই একটি করে সিম এক্টিভ করে তারা। পরবর্তীতে এসব এক্টিভ সিমগুলো চওড়া দামে বিক্রয় করে রিটেলাররা। আর তাদের থেকে সিম কিনেই প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে প্রতারকরা।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আশরাফুল আলম বলেন, পিনকোড দিলে অ্যাকাউন্টের টাকা হাতছাড়া হবে জেনেও অধিকাংশ মানুষ এই ভুল করছে। এর চেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো নিরীহ মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা একাধিক সিম দিয়ে ঘটানো হচ্ছে এসব অপরাধ। আমরা একাধিক অভিযানে এমন অনেক সিমের তথ্য পেয়েছি।
সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের দেওয়া তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বরের ১ থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত ৪৯টি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণার অভিযোগ এসেছে। এরমধ্যে ৪২টি মামলা হয়েছে। ১৫টি অভিযোগের সমাধান হয়েছে। বাকিগুলোর তদন্ত চলছে।
সিআইডি পুলিশ সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল হাসান বলেন, সিম রিটেলাররা অসচতেন মানুষ থেকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে একাধিক সিম নিবন্ধন করিয়ে নেন। পরে সেগুলো অপরাধীদের কাছে বিক্রি করেন। আমরা এখন পর্যন্ত মোবাইল ব্যাংকিংয়ে জড়িত যত প্রতারককে গ্রেফতার করেছি তাদের কাছে থাকা বেশিরভাগ সিমই নিরীহ মানুষের নামে নিবন্ধন করা।