স্টাফ রিপোর্টার ॥ অপপ্রচারকারীদের রুখতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও করোনা ভ্যাকসিন নেয়া শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার ভ্যাকসিন প্রয়োগের দ্বিতীয় দিনে সরকারের মন্ত্রী, সচিব এবং বিশিষ্ট চিকিৎসকরা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন। ঢাকার পাঁচ হাসপাতালে এ দিন ৫৪১ জনকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। ভ্যাকসিন গ্রহণের পর কোন ধরনের পাশর্^প্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়নি। সাধারণ মানুষকে কোন ধরনের অপপ্রচারে কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে নিরাপদ ভ্যাকসিন গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভ্যাকসিন প্রয়োগের দ্বিতীয় দিনে যে ৫৪১ জন ভ্যাকসিন নিয়েছেন এদের মধ্যে দুজন প্রতিমন্ত্রী এবং দুজন সচিব রয়েছেন। প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। দুজন সচিবের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান এবং তথ্য সচিব খাজা মিয়া ভ্যাকসিন নিয়েছেন।
সকালে ভ্যাকসিন গ্রহণের পর বিকেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভিসি ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া জনকণ্ঠকে বলেন, সকালে ভ্যাকসিন গ্রহণের পর বিকেল পর্যন্ত কোন সমস্যা হয়নি। সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছি। সাধারণ মানুষকে কোন ধরনের বিভ্রান্তিতে কান না দিয়ে ভ্যাকসিন গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু ভ্যাকসিন নিলেই হবে না। এর সঙ্গে স্বাস্থ্য বিধি মানতে হবে। মাস্ক পরা এবং ঘনঘন হাত ধোয়ার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বৃহস্পতিবার লক্ষ্যের চেয়ে আরও ৪১ জনকে বেশি ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছে। আগের ঘোষণা অনুযায়ী এদিন ৪০০ থকে ৫০০ জনকে ভ্যাকসিন প্রয়োগের কথা ছিল। যাদের আগামী এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রাখতে চায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে একযোগে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করতে চায় সরকার। এজন্য সুরক্ষা এ্যাপসে ইতোমধ্যে রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে।
হেলথ ইমার্জেন্সি অপরারেশন সেন্টার ও কন্ট্র্রোলরুম সূত্র বলছে, বৃহস্পতিবার ভ্যাকসিন নেয়ার তালিকায় ৫৪১ জনের নাম এসেছে। এদের মধ্যে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ৫৮ জন ভ্যাকসিন নিয়েছেন। এদেও মধ্যে ৩৮ জন চিকিৎসক, ৩ জন নার্স এবং অন্য আরও ১৭ জন রয়েছেন। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১০০ জন ভ্যাকসিন নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৫০ জন চিকিৎসক, নার্স ১৩ জন এবং অন্য ৩৭ জন ভ্যাকসিন নিয়েছেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে একজন ভিআইপি, ৫৪ জন চিকিৎসক, ৭ জন নার্স এবং ৫৮ জন অন্যান্য ব্যক্তি ভ্যাকসিন নিয়েছেন। মুগদা মেডিক্যাল কলেজে ১২ জন চিকিৎসক, ৫ জন নার্স এবং অন্য ৪৮ জন ভ্যাকসিন নিয়েছেন। বিএসএমএমইউতে সবচাইতে বেশি মানুষ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। সব মিলিয়ে হাসপাতালটির ১৯৮ জনের মধ্যে ৪ জন ভিআইপি, ১৪২ জন চিকিৎসক, ৪ জন নার্স এবং ৪৮ জন অন্যান্য ব্যক্তি ভ্যাকসিন নিয়েছেন।
এদিকে দেশের প্রথম সংসদ সদস্য হিসেবে ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে ভ্যাকসিন নেন তিনি। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, একটা শ্রেণী ভ্যাকসিন নিয়ে অপপ্রচার করছে। আমি ভ্যাকসিন নেয়ার পরে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করিনি। কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা দেশে আসার আগে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন ওঠে। নেতিবাচক কিছু রাজনৈতিক প্রচারও তার সঙ্গে যুক্ত হয়। সেই প্রসঙ্গ টেনে পলক বলেন, অনেকের ভেতরে যে প্রশ্ন ছিল রাজনীতিবিদরা কেন টিকা নিচ্ছে না, সেই জায়গা থেকেই গতকাল আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি টিকা নেব।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর ভ্যাকসিন প্রদান কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমের পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম ঘুরে দেখে মন্ত্রী বলেন, করোনা নিয়ে সব ধরনের গুজব মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে করোনার ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। প্রতিটি ভ্যাকসিন কেন্দ্রে একটি অন্যরকম আমেজ চলে এসেছে। ভ্যাকসিন গ্রহীতা কোন একজনেরও কোন রকম অসুবিধা হয়নি।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, এক শ্রেণীর ইসলামিক বক্তা ছাড়াও দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং ইউটিউবে এক শ্রেণীর মানুষ বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে নানা রকম প্রচার চালাচ্ছে। যার কোন ভিত্তি না থাকলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা রকম ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে ভ্যাকসিন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে ভিআইপিরাও ভ্যাকসিন নিচ্ছেন, যা দেশের মানুষের মধ্যে আস্থার সঞ্চার করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবিএম জামালসহ বিভিন্ন ফ্রন্টলাইনরা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন। এদিকে বিএসএমএমইউ এক খবর বিজ্ঞপ্তিতে বলছে, দেশের প্রখ্যাত চিকিৎসকদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ জাহিদ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ ও বক্ষব্যাধি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার, সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. চৌধুরী ইয়াকুব জামাল, ডেন্টাল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. গাজী শামীম হাসান, নার্সিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোঃ মনিরুজ্জামান খান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোজাফফর আহমেদ, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোঃ জুলফিকার আহমেদ আমিন, নিউরোসার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এটিএম মোশারেফ হোসেন, ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ সায়েদুর রহমান, লিভার (হেপাটোলজি) বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, শিশু কিডনি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. রণজিত রঞ্জন রায়, সিন্ডিকেট মেম্বার অধ্যাপক ডা. এএইচএম জহুরুল হক সাচ্চু, সহকারী প্রক্টর ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. কে এম তারিকুল ইসলাম, সেবা তত্ত্বাবধায়ক সন্ধ্যা রানী সমাদ্দার প্রমুখ ভ্যাকসিন নিয়েছেন।