সেলিনা হোসেন:
সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। করোনা মহামারিতে বিগত বছরে অনেক স্বজন-প্রিয়জন হারিয়েছি আমরা। আশা করছি নতুন বছর ২০২২-এ সবাই সচেতনভাবে এই মহামারি থেকে নিজেদের সুরক্ষায় আরো বেশি সচেষ্ট হব। করোনা মহামারি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে চাই আমরা।
নতুন বছরে সামাজিক মূল্যবোধের ক্ষেত্রেও যেন আমরা পিছিয়ে না পড়ি সেদিকে নজর রাখতে হবে। নারী-শিশু কেউ যেন নির্যাতিত না হয়। নৈতিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষার পাশাপাশি সব ধরনের নিপীড়ন, নির্যাতনের ইতি টেনে দেশের মানুষ যেন সুখী, সুন্দর জীবন যাপন করতে পারে, এটাই হোক নতুন বছরে আমাদের প্রাণের প্রত্যাশা।
বিগত বছরে আমাদের অনেক প্রাপ্তি যেমন ছিল, কিছু অপ্রাপ্তিও ছিল। অনেক ঘটনা যেমন আমাদের প্রেরণা জুগিয়েছে, কিছু ঘটনা আশাহতও করেছে। সব অপ্রাপ্তি, হতাশা ভুলে নতুন বছরে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার কথা চিন্তা করব আমরা। নতুন বছরটি হোক আমাদের অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার বছর।
ধর্মের নামে কাউকে নসাৎ করে দেওয়া হবে, নতুন বছরে যেন এমনটি আর না হয়। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে পাকিস্তানের কারাগার থেকে দেশে ফিরে রাজশাহী মাদরাসা ময়দানে তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমার কাছে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই সমান। যার যার ধর্ম নিয়ে সে তার উৎসব করবে। সবার নাগরিক অধিকার সমুন্নত থাকবে।’
বাংলাদেশের ৫০ বছরে, বিজয়ের এই সুবর্ণ জয়ন্তীতেও আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনার জায়গাটি এখনো তৈরি করতে পারিনি—এটা আমাদের জন্য অবমাননাকর। আমি প্রত্যাশা করি, বর্তমান সরকার ভবিষ্যতে এই জায়গাটিতে নতুন করে আলো ফেলে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে উদ্যোগী ভূমিকা রাখবে।
তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার অনেক প্রত্যাশা। এই দেশমাতৃকার হাল একসময় তারাই ধরবে। শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সবার আগে তারাই সোচ্ছার হবে, প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। আশা করব, নৈতিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ হয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় দেশ গড়ার শপথ নিয়ে আলোকিত জীবন গড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে আসবে তারা।
সবশেষে শোষণ-বঞ্চনার অবসান করে মনুষত্ববোধের চেতনায় সমৃদ্ধির নতুন দিগন্ত আবিষ্কার করব—এই হোক নতুন বছরে আমাদের অঙ্গীকার।
লেখক : কথাসাহিত্যিক